Saturday, June 12, 2010

কমিউনিটি বাংলা ব্লগ এবং ডিজিটাল ডিভাইড

বাংলা কমিউনিটি ব্লগ গুলি সম্পর্কে প্রথম ধারনা লাভ করি চিন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে, তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ক মেলায় সামু ব্লগের ষ্টলের মাধ্যমে। মেলায় হতে বাসায় এসে দুই একবার তাদের সাইটে ঢু মারলেও এরপর আর তেমন একটা ব্লগানোর উৎসাহ লাভ করিনি, পারিপার্শ্বিক নানা ধরনের ব্যস্ততার কারণে। ২০০৮ সালে কাজের চাপ কিছুটা কমার ফলে কি মনে করে হঠাৎ করে সামু ব্লগে ঢুকি এবং ব্লগার সবাকের জামাত শিবির বিষয়ক একটা ক্যাচাল পোষ্ট এবং তার নিচে করা অগণিত পাঠকের সরস সব মন্তব্য পড়ে বেশ উপভোগ করি এরপর ধীরে ধীরে দিনমজুর অমি রহমান পিয়াল ভাই সহ্ অনেক লেখকের লেখার সাথে পরিচিত হই ধীরে ধীরে ব্লগে লেখার পড়ার এক ধরনের আজব নেশায় ধরে।

পরিবারিক ভাবেই আমাদের ঘরের সবার বই পড়ার এবং লেখার অভ্যাস আছে আমার বাবা মা দুজনেই লেখক এমনকি আমাদের ঘরের মধ্যে যে পিচ্ছি ছোঁকরাটা মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে সেও দেখি অনেক লেখালিখি করে এবং বই পড়ে একমাত্র আমিই শুধুমাত্র লেখার চেয়ে পড়াতে বেশি বিশ্বাসি হয়তো আলসেমির অভ্যাসের কারণেই! বাংলা ব্লগগুলিকে কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ তাদের কারণে এখন অল্প বিস্তর লেখালিখিতেও উৎসাহ এসেছে।

এক সময় মানুষ পত্রিকার ভিতরে নানা বিদ্বান্‌ বিশেষজ্ঞদের নানা ইস্যু নিয়ে প্রকাশিত লেখাগুলি পড়ত, লেখালিখির ব্যাপারটা কিছু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের মধ্যেই সীমিত ছিল, যশহীন খ্যাতিহীন সাধারণ মানুষদের মত প্রকাশ পত্রিকা ম্যাগাজিনের সম্পাদকের মর্জির উপর নির্ভর করত, বাংলা ব্লগগুলিকে বলা যায় প্রচলিত মিডিয়ার উপরে এতোদিন কিছু এলিট লোকদের যে মনপলি ছিল তার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের বিকল্প প্লাটফর্ম গড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। নতুন এ মিডিয়া মাধ্যমের উথান দেখে অনেক মুল ধারার বড় মিডিয়া হাউজও ব্লগ সাইট তৈরি করছে প্রথম আলো যার উজ্জ্বল উদাহরণ।

প্রত্যেকটা ব্লগ সাইট এর ক্রমাগত ইউজারদের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখে বলা যায় বাংলা ব্লগ তার আরম্ভের প্রথম ধাপ বা পর্যায় শেষ করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের ব্লগের পোষ্টগুলি পড়ে মনে হল সময় এসেছে ব্লগের আরো বিকাশের স্বার্থে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা অর্থাৎ বাংলা কমিউনিটি ব্লগের ধারনাকে সারাদেশ ব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলা । বাংলা ব্লগগুলির অধিকাংশ ব্লগারই মনে হয় ঢাকায় বসবাসকারি অথবা প্রবাসি একারণে অভ্র, বিদেশি সিনেমার রপ্তানী নিয়ে, বাকশাল, আমার দেশ, মাহমুদর রহমান ফরহাদ মজাহার এই সব টপিক নিয়ে যেভাবে পোষ্ট পড়ে এবং আলোচনা হয় সেভাবে খুলনা অঞ্চলের নাগরিক সমস্যা বা ইস্যু অথবা রংপুরের কৃষকদের তার পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে কোন পোষ্ট পড়ে না, ঢাকায় কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি যদি ঢাকা শহরে না হয়ে রাজশাহীতে সংঘটিত হতো তাহলে আমার ধারনা হতাহতের সংখ্যা এরচেয়ে বেশি হলেও তা নিয়ে মাতামতির পরিমাণটা অনেক কম হত এটার জন্য আমি ঢাকার ব্লগার কিংবা প্রবাসি ব্লগারদের মোটেও দায়ী করব না কারণ রাজশাহীর নগরের সমস্যার কথা একমাত্র সেখানেই বসবাসকারী লোকই বুঝতে পারবে, কাজেই বাংলা ব্লগগুলিকে সত্যিকার অর্থেই তৃণমুল মানুষের কন্ঠস্বরে পরিণত করতে চাইলে মফস্বলে বসবাসকারি শিক্ষিত নাগরিকদের ব্লগ সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার কার্যক্রম অবশ্যই হাতে নেওয়া দরকার।

বিশ্বায়নের অবাধ তথ্য আদান প্রদানের এই যুগেও বাংলাদেশের তথ্য প্রবাহের ধারা একমুখি অর্থাৎ রাজধানী হতে তা মফস্বল কিন্তু মফস্বল হতে তা এখনও সেরকমভাবে শহর মুখি না এই যে ব্যবধান অসংগতি তা পূরণে বাংলা কমিউনিটি ব্লগগুলা অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

মোবাইল কম্পানিরগুলির সুবাদে ইন্টারনেট সুবিধা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও বিস্তার লাভ করছে, আমি খাগড়াছড়ি ,রাঙ্গামাটির এবং বান্দরবান জেলার অনেক পাহাড়ি উন্নয়ন কর্মির ঘরেও নেট সংযোগ দেখেছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা রাজশাহি বিশ্ববিদালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত অনেক উদ্যমী ছাত্র ছাত্রীকে দেখেছি যারা তাদের এলাকার সমস্যার কথা নিয়ে লিখালিখি করতে চায় কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রিক মুল ধারায় মিডিয়াগুলির কাছে তাদের এ উদ্যমের খুব একটা দাম নেই, কারণ ঢাকা কেন্দ্রিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নাগরিকদের ঘিরেই তারা তাদের মিডিয়া ব্যাবসা পরিচালনা করতে চায়, ফলে এসব মফস্বলে নীবিন সাংবাদিকেরা যে স্বপ্ন নিয়ে এ পেশায় আসে তা ক্রমেই ফিকে হয়ে যায় , প্রতিটি মফস্বল অঞ্চলে সাংবাদিক ছাড়াও সংখ্যায় কম হলেও নানা বিষয়ে লেখালিখি করতে ভালোবাসেন এরকম একটা সম্প্রদায় আছে তাদের মফস্বলে অবস্থানের কারণে তা মূলধারার মিডিয়াতে আসছে না, অন্যদিকে অনেকের হয়তো নেট সংযোগ নেবার সামর্থ্য থাকলেও নেটে যে এভাবে লেখালিখি করা সম্ভব সেই সম্পর্কে কোন আইডিয়াই নেই।

ভাবুন তো একবার এসব মফস্বলে বসবাসকারি নাগরিকদেরকেও যদি আমরা কমিউনিটি ব্লগ আন্দোলনে সামিল করতে পারতাম মফস্বলে হতে তাদের সুখ দুঃখের কথাগুলি যদি ডিজিটাল পাতায় চলে আসত অনায়সে তাহলে কতোবড় একটা বিপ্লব ঘটে যেতো দেশে!

দেশের বিরাজমান নানা ধরনের সমস্যা অনাচার অসংগতি নিয়ে ব্লগে অধিকাংশ সময় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলা আর রাষ্ট্রযন্ত্রের নীতিনির্ধারকদের গালাগালি দিয়ে ব্লগারদের নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুর করা থাকে না, কিন্তু মফস্বল ও শহুরের নাগরিকদের মধ্যে যে ডিজিটাল ডিভাইড কাজ করেছে তাকে কিছুটা হলেও দূর করার কাজে ব্লগারেরা কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারি কীভাবে করা যাবে তার উত্তর দিতে নিচে একটা প্রাথমিক রূপরেখা প্রণয়ন করলাম –

১। সুচনার দিকে প্রবাসি ও ঢাকার নাগরিকদের সমন্বয়ে একটা অর্থ তহবিল করা যার মাধ্যমে যেসব মফস্বল অঞ্চলে নেট সংযোগ এখন বিদ্যমান সেখানকার সাংবাদিকদের এবং লেখালিখি সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কে কমিউনিটি ব্লগ সম্পর্কে ধারনা প্রদান করা কীভাবে পোষ্ট দিতে হবে সে সম্পর্কে কর্মশালার আয়োজন করা

২। যেসব মফস্বল অঞ্চলে নেট সংযোগ আছে এরকম অঞ্চলের ইস্কুল কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্র ছাত্রিদেরকেও বাংলা কমিউনিটি ব্লগ ধারনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া

৩। উপরের উদ্যোগগুলি সফল হলে সে অঞ্চলের ব্লগারদের নিয়ে ফোরাম গঠন করা

৪। স্কুল-কলেজে ব্লগকে সৃজনশীলতার মাধ্যম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। ইন্টারনেট মানেই যে পর্ন বা সময় নষ্ট করা নয়; বরং তথ্য-প্রযুক্তির সর্বাধুনিক উপায়, এই সচেতনতা সৃষ্টি দরকার।

উপরের কয়েকটা আমার মাথায় আসা তৎক্ষণাৎ আইডিয়া, ব্লগে আলোচনা সাপেক্ষে আরও অনেক আইডিয়া এর সাথে সংযোজন বিয়োজন করা যায়। আমার ব্লগকে আমার সব সময়ই অন্য ব্লগগুলি হতে স্বাতন্ত্র্য বলে মনে হয়েছে কারণ বাংলা ব্লগে সর্ব প্রথম নো মডারেশন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা, ব্লগের লেখাগুলি নিয়ে প্রথম একুশে বইমেলায় বই বের করা, যুদ্ধে অপরাধীদের বিচারে জনসচেতনা মতো উদ্যোগ নিয়েছে আমার ব্লগ। তাই এক্ষেত্রেও আমার ব্লগের সাথে জড়িতরা অগ্রণী কোন পদক্ষেপ নিবেন এটিই কামনা করি।

No comments:

Post a Comment