Saturday, June 12, 2010

বাংলা নববর্ষের সমর্থনে আমার কিছু কথা

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় শত উৎসব পার্বণের দেশ বাংলাদেশে কোন উৎসবটা আমার কাছে প্রিয় আমি একবাক্যে কোন প্রকার চিন্তা না করে উত্তর দিব কেন বাংলা নববর্ষ! এরপর যদি কেউ আরও একটু আগ বাড়িয়ে জানতে চায় কেন এধরনের পক্ষপাত প্রদর্শন আমার সাফ জবাব হবে এই উৎসবের চরিত্রটা একে বাকি সব উৎসব থেকে পৃথক্ করেছে বাংলার বাকি উৎসবগুলার একটা ধর্মীয় দিক আছে ফলে সেই সব পার্বণের আয়োজনের জন্য স্বাভাবিক ভাবে পালনকারিদের মধ্যে কিছুটা ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায় সোজা ভাষায় টেনশনে থাকতে হয়যেমন কোরবানির ঈদের সময় কোরবানি মাংস আত্মীয় স্বজন এবং গরীবদের মাঝে ভালোভাবে বিলি বণ্টনের দায়িত্ব এবং তা সংরক্ষনে কাজে ব্যস্ততার দরুন দেখা যায় পরেরদিন ছাড়া আনন্দ করা যায় না, সনাতন অনুসারীদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার সময় ঢাকেঈশ্বরি মন্দিরের বাইরের লম্বা লাইনে ভক্তদের দাঁড়ানো দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না এক্ষেত্রেও একই অবস্থা, নববর্ষ হচ্ছে একমাত্র এমন একটা উৎসব যেখানে পাবলিক টেনশন ফ্রী হয়ে উৎসবটাকে পুরাপুরি উপভোগ করতে পারে সে যে ধর্মের অনুসারী হোক না কেন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে আজ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ জর্জরিত সেখানে আমার কাছে প্রাচীন কিন্তু সর্বজনীন এই উৎসবটার পালনে সাধারণ মানুষের আবেগ আগ্রহ চমৎকার একটা ব্যাপার বলেই মনে হয়।

ধর্মীয় উৎসবের বাইরেও আছে বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসের কথা বলা যায় কিন্তু এদেশের রাজনীতিবিদের সভা সেমিনারের মল্লযুদ্ধের এবং জলপাই মামাদের কুঁচ কাওয়াজের নীরব দর্শকের ভূমিকায় পালন করা ছাড়া এই সব দিনে মাঙ্গ পাবলিকের আর কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে ( তবে আশার কথা এক্ষেত্রে দিন অনেকটাই বদলে গেছে বাংলা ব্লগ এবং নাঈম মামার আমাদের সময়ের মন্তব্য বিভাগের কারণে! আম জনতা ভারচুয়াল মল্ল যুদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে) এ পর্যন্ত আমার লেখা পড়ে অনেকে বলবেন বইমেলা কি দোষ করল ! এটাকেও তো আম জনতার উৎসব বলা যায় টিভি চ্যানেলগুলার নিউজে বই মেলার উপর খবর দেখলে তো মনে হয় না যে তাতে নববর্ষ হতে কম লোক সমাগম হয় তাইলে কি আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে কি গলদ আছে ? আমার জবাব হবে ১৫ কোটির দেশের সাক্ষরতার হার নিয়ে একটু গুণভাগ করে দেখুন তাহলেই উপলব্ধি হবে মুষ্টিমেয় ঝোলাওয়ালা এবং আমার মতো যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা খুবই ছোট অংশ তাদের ছাড়া আম জনতার মধ্যে বই মেলা নিয়ে খুব একটা উচচ্ছাস নেই তবে এখানে আমি ফুচকাওয়ালা, ফেরিওয়ালাদের গুনায় ধরছি না অর্থনীতিক কারণ হেতু তারা হয়তো এ উৎসবের প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখাতে পারে!

১৯৯০ দশক হতে বাংলাদেশি জাতীয়াতাবাদি শিবিরের থিন্ক ট্যাংক শফিক রেহমানের কল্যাণে ভ্যালেনটাইন ডে এর পরে মোবাইল , ক্রিম, ম্যাগি নডুলস কোম্পানী এবং প্রাইভেট চ্যানেলগুলির কারনে ওমেন ডে, ফাদার মাদার ডে সহ না কিসিমের ডে পালনের সুযোগ লাভ পাচ্ছে বাঙালী বলা যায় তবে তা এখনও ‘গুলাসান এভিনিউ‘বাসিন্দাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে তা ভবিষ্যতে কি হবে বলতে পারছি না।

আজকাল আবার ব্লগগুলিতে লক্ষ্য করছি দুই কিসিমের লোক বাংলা নববর্ষ পালনের ব্যাপক বিরোধিতা করছে প্রথম গ্রুপের বিরোধিতার কারণ মওদুদি কিংবা আরবের শেখরা এটা পালন করতে বলে নাই কাজেই বাংলা নববর্ষ পালন করা একটা বেদাতি কাম এটা আসলে হিন্দুদের কালচার এর মাধ্যমে শিবসেনা বিজেপি বাঙালী মুসলমানদের মগজ ধোলাই করছে ( আশা করি নয়া দিগন্তে এবং সংগ্রাম পত্রিকা এ নিয়ে লাদানি বাহির বের করবে কালকে) অথচ এ আবালের দল মগ বাজারের মওদুদি চটি বইয়ের বাইরে যদি একটু ইতিহাসের বইপত্র গুলি ঘাটাঘাটি করত তাহলে জানতে পারত রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের যুগে প্রবর্তন হয় বাংলা সালের। ষোড়শ শতকে আকবর 'ফসলী সন' প্রবর্তনের মাধ্যমে যে বাংলা সাল চালু করেন সময়ের বিবর্তনে সেই দিনটি এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব পরিণত হয়েছে । আকবরের নব রতন সভার আমির ফতেহ উল্লাহ খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য হিজরি চান্দ্রবর্ষকে সৌরবর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ফসলি সালের শুরু করেন। তিনিই হিজরিকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। বৈশাখ নামটি নেওয়া হয়েছিলো নক্ষত্র ‘বিশাখা' থেকে।

এখন এই লোক আমির ফতেহ উল্লাহ কি র কিংবা মোসাদের এজেন্ট ছিল কিনা তার খৎনা ঠিক মতো করা হয়েছিল কিনা তা ঠিক ভালো করে বলতে পারব না ! যারা নব বর্ষের বিরোধিতা করে তারা আজকের দিন ঘরে দরজা বন্ধ করে এ নিয়ে গবেষণা করুক।

আরেক গ্রুপের বিরোধিতার কারণটা আবার ভিন্ন তবে এদের মধ্যেও ছাগুটাইটিস রোগের লক্ষণ প্রবল বলেই মনে হয় তাদের যুক্তি যারা নব বর্ষের দিনে খালি পাঞ্জাবি পড়ে ইলিশ পান্তা ভাত ভক্ষণ করে বাকি দিন শার্ট প্যান্ট পড়ে মুঠো ফোন কানে দিয়ে ঘুরে তাদের মধ্যে আসলে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি কোন টান নাই এগুলা আসলে সবই টাউট বাটাপার লোক বলে ফতোয়া দিচ্ছে । বিশ্বায়নের কারনে ইয়াংকি বা মার্কিনি কালচারের দাপটে বাকি জাতিগুলির কৃষ্টি সংস্কৃতিগুলি কিছুটা কোনা ঠাসা অবস্থা এ অবস্থা শিল্প উন্নত দেশ জাপান কোরিয়ার ব্যাপারে যেমন সত্য তেমনি আমাদের বেলায় সত্য একারনে যেমন কিমোর মতো এতিহ্যবাহি পোশাক জাপানে বলতে গেলে আর চোখে পরে না সব জায়গায় স্যুট টাইয়ের জয়গান, ফাস্টফুড কালচারও শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে কিন্তু নববর্ষের দিনে দেখা যায় জাপানি নর নারীরা নিজেদের এতিহ্যবাহি পোশাক পরে নিজেদের নববর্ষ পালন করছে হয়তো পরের দিনই তারা আবার সেই স্যুট কোটে ফিরে যাবে টিকে থাকার তাগিদে কিন্তু একটা দিন তারা নিজের কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রতি যে ভালোবাসা দেখালো তাকে কি স্রেফ মূল্যহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে ? বাংলা নববর্ষের দিন আমাদের পাঞ্জাবি শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ানোকে এতিহ্যবাহি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করারকে নিজের কালচার বা শিকড় কাছে যাবার এবং নবীন প্রজন্মকে এ ব্যাপারে সচেতন করার একটা চেষ্টা হিসেবেই দেখি।

প্রথমে ভেবেছিলাম নববর্ষ উপলক্ষে দু এক লাইন লিখব কিন্তু এখন দেখি অনেক বক বক করে ফেলেছি কাজেই এখন অফ গেলাম
নতুন বাংলা বছর ১৪১৭ তে সকলের জীবনে আনন্দে ভরে জাগ এ কামনা করে আজকের মতো এখানেই অফ গেলাম ।

No comments:

Post a Comment