Saturday, June 12, 2010

বোকার বাক্স নিয়ে কিছু বকবকানি

যতদূর আমার মনে পড়ে ডিশ টিভির সংস্কৃতি বাংলাদেশে ৯২ সালের দিকে প্রবেশ করলেও তখন পর্যন্ত বলতে গেলে তা উচ্চবিত্তের বিলাসিতার চিজ বলেই সকলের কাছে গণ্য হতো। আমাদের বাসায় সেই সময় ডিস কানেকশন ছিল না বিটিভির আলিফ লায়লা কিংবা সোর্ড অফ টিপু সুলতানই ছিল বিনোদনের উৎস। পরবর্তীতে অবশ্য ক্যাবেল মামুদের কল্যাণে ডিস কানেকশনও মধ্যবিত্তের এর নাগালে ধীরে ধীরে আসতে থাকে এখন তো খাগড়াছড়ির মতো প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলেও ডিস কানেকশন চলে গেছে! শহুরে মধ্যবিত্তের কাছে পানি, বিদ্যুৎ এর মতো ডিস কানেকশনও একটা অপরিহার্য জিনিসেও পরিণত হয়েছে আজ। কাজেই ডিসের কানেকশনকে আর আগের মতো কেউ বিলাসিতার জিনিস হিসেবে কেউ কটাক্ষ করে না ।

এখন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য শুনালেও ডিস কালচারের প্রথম দিকে কিন্তু হিন্দি টিভি চ্যানেলগুলা তেমন একটা ভাত পায়নি এদেশের দর্শকদের কাছে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকজন ষ্টার প্লাস অপেক্ষা ষ্টার মুভিজে কি দেখল তা নিয়ে আলোচনা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত(অবশ্য জি হরর শো ব্যাপারটা আলাদা ছোট ছিলাম বলে তা দেখার সাহস হতো না মিউজিক শুনলেই সোফার তলায় আমার অবস্থান!) আমাদের ইংরেজি না জানা মা খালাদের কাছেও কোলকাতার বা জি সিনেমার বাংলা সিনেমাগুলাই ছিল বিনোদনের উৎস। বাংলাদেশের নিজস্ব চানেল বলতে আজিজ ভাইয়ের ATV তে নাসির গোল্ড বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে কিছু বাংলা সিনেমা!

স্বভাবতই প্রশ্ন আসে হিন্দি চানেলগুলা কি এমন যাদু করল যে তাদের সেই অচ্ছুৎ অবস্থা হতে আজকে তারা বলতে গেলে আমাদের মধ্যবিত্তের বিনোদনের একটা বড় অংশ দখল করে আছে। আমাদের মা খালরা যারা আগে টিভির খুব একটা বসত না তাদের হাত থেকে এখন রিমোট দখল করতে রীতিমতো লড়াই করতে হয় এ অবস্থা শুধু আমাদের নয় নেপাল, আফগান এমনকি ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তানেরও হিন্দি চানেলগুলা দর্শকদের বিনোদনের একটা বড় অংশ দখল করে আছে।

হিন্দি চানেলগুলার সাফল্যের এই রহস্য বুঝতে হলে একটা টিভি শো কথা আমাদের বিশেষ করে জানতে হবে যা হিন্দি চানেলগুলাকে দক্ষিণ এশীয়ার দর্শকদের মাঝে আসন গেঁড়ে নিতে সাহায্য করেছে। যারা নিয়মিত টিভি দেখেন তার হয়তো ইতিমধ্যেই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন আমি কোন শোর কথা বলতে চাচ্ছি সেই টিভি শো টার নাম হল কোন বনেগা কোররপতি বা সংক্ষেপে কেবিসি যার হোস্ট ছিলেন অভিনেতা অমিতাভ বচন, ২০০০ সালের ষ্টার প্লাস এ টিভি শো আরম্ভ করে।

যেখানে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ উপার্জনের তাগিদে দক্ষিণ এশীয়ার জনগণকে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে নামতে হয় প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে সেখানে এক একটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে লাখপতি কোটিপতি হওয়ার সুযোগ দেওয়া টিভি শোর ভূমিধস জনপ্রিয়তা পাওয়ারই কথা হয়েছিলোও তাই শুনা যায় কেবিসি অনুষ্ঠান যখন ভারতে আরম্ভ হতো সারা ভারতের রাজপথ ফাঁকা হয়ে যেতো! কারণ সবাই তখন টিভির সামনে। যদিও বাংলাদেশের লোকদের এ টিভি শোতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না কিন্তু চোখের সামনে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লক্ষপতি কোটপতি বনে যাওয়ার আজব এই খেলা এদেশের টিভি দর্শকদের মাঝে ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ! কাজ কাম ফেলে এ টিভি শোটা দেখার লোক এদেশেও কম ছিল না। তাই বলা যায় কেবিসি হিন্দি চানেলগুলাকে টিভির প্রাইম স্লট দখল করতে সাহায্য করেছিল।

সেই সময় কেবিসির প্রত্যেকটা পর্ব আমিও পাগলের মতো দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম শালা আমি যদি অমিতাভ এর কেবিসিতে হট সিটে বসার সুযোগ পেতাম আমার কোটিপতি হওয়া ঠেকায় কে ? অমিতাভ এবং ষ্টার প্লাস আমার সে ইচ্ছার কদর না করলেও আজকে পত্রিকা পরে জানলাম বাংলা চানেল দেশ টিভি এ টিভি শোটা করার জন্য জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিয়নিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো অনুষ্ঠান তৈরি হবে। আর তা হবে বাংলায়। বাংলাদেশের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে সাজানো হবে সবকিছু। এর কারিগরি দিকে মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে শতভাগ মিল রাখার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে একটি দল আসবে। ঢাকায় এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেলটা বেকে অনুমতি দিয়েছে হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিয়নিয়ার কর্তৃপক্ষ। তারাই কারিগরি দিক নিয়ন্ত্রণ করবে। তাদের সহযোগিতা করবে রেড ডট। এ পর্যন্ত ১০১টি দেশের টিভি চ্যানেলে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে তৈরি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশ এই তালিকায় ১০২তম দেশ। , এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিগগিরই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

ভারতের কেবিসিতে হর্ষবর্ধন নামে একজন আইএস পরীক্ষার্থী( যাকে আমরা বাংলায় বলতে পারি বিসিএস) প্রথম পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়েছিল। যারা ২৮ বা ২৭ বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন কিন্তু সফল হননি অথবা পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ বাজিমাত করতে পারেন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম ।

দেশ টিভির হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিয়নিয়ার এর বাংলা ভার্সন কয়জনকে কোটিপতি বানাবে তা আগাম বলতে পারব না তবে এই টিভি শোকে নিয়ে পাকা গণকের মতো তিনটা ভবিষ্যৎবানী করতে পারি এক কেউ কোটিপতি না হোক গ্রামীণ, বাংলা লিংক, ওয়ারিদ, দেশ টিভি যে এ টিভি শোর কল্যাণে কোটিপতি হয়ে যাবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। দুই সঠিক পরিকল্পনা নিলে ভারতের কেবিসি কারণে আমাদের যে বিশাল দর্শক শ্রেণী হিন্দি চানেলমুখি হয়েছিল আশা করা যায় আমাদের কেবিসি তাদের বাংলা চানেলগুলামুখি করবে। তিন এনিয়ে ব্লগে ব্লগে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠবে সামুতে এ নিয়ে ফান পুষ্ট পড়বে, সচুতে কোন আতেল ব্লগার এ টিভি শোর কল্যাণে কীভাবে আমাদের বাঙালি লোকায়ত চেতনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে পোষ্ট লম্বা পোষ্ট ঝাড়বে , আর আমুতে আমি তখন বলব এ বিষয় নিয়ে দেওয়া প্রথম পোষ্টটা কিন্তু আমার ছিল !

No comments:

Post a Comment