Saturday, June 12, 2010

দেশের মেরুদণ্ড গড়ার কারিগরদের সবার আগে মেরামত করবার প্রয়োজনীয়তা

একসময় রমনাতে থাকার কারণে বিকাল বেলা হেঁটে বেইলি রোডে যাওয়া এবং সেখানকার ফাস্ট ফুডের এবং বইয়ের দোকানগুলাতে ঢু মারা আমার বলতে গেলে একপ্রকার রুটিনে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, বেইলি রোডেই বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য সবচেয়ে সেরা বিদ্যাপীঠ বলে পরিচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অবস্থান যার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার পরিচয় নেই, সকল সচেতন মেয়ের মা বাবাই সেখানে তাদের মেয়েকে পড়াতে চান।

ইস্কুল ভর্তি যুদ্ধের সময়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনের উৎকণ্ঠিত অভিভাবক এবং ছাত্রীদের সারি জীবনে অনেকবার দেখার সুযোগও হয়েছে, আমাদের পরিবারে কোন বোন না থাকলেও পরিচিত এক আত্মীয়ার কন্যার সেখানে ভর্তি না হতে পারার বেদানা বিদুর চেহারা দেখেই কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের একটি সিটের কতখানি দাম, বাংলাদেশের শিক্ষা সচেতন পরিবারগুলির এই আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কিছু শিক্ষক ও কর্মচারি অনেক ধরেই বাণিজ্যের বেসাতি করে আসছিল কয়েক বছর ধরেই টাকা নিয়ে ছাত্রির ভর্তির সিণ্ডিকেট, বিদ্যালয়য়ে নানা কাজের টেন্ডারে দুর্নীতি নিয়ে নানা কথা কানে আসছিল পরিচিত অনেকের কাছ হতে।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসবার পর সংসদ রাশেদ খান মেনন এ চক্রটিকে নির্মূল করবার চেষ্টা করেন কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার বেগম এতে সহজে কেন এরকম একটি স্বর্ণের খনির উপর হতে নিজের দাবিনামা ছাড়বেন তিনি এ বিষয়টি নিয়ে কোর্টের দ্বারস্থ হন , নিজের পদ রক্ষার মরিয়া লড়াইয়ে নামেন প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে, এমনকি এর জন্য রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে কিছু মিডিয়ার সাথে আঁতাত করে নোংরা কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি খেলা খেলতেও দ্বিধা করেননি কিন্তু গত বুধবার হাইকোর্ট রোকেয়া আক্তারের রিট আবেদন খারিজ করে দেয় জনাব মেনন কয়েকজন শিক্ষকের মাধ্যমে রোকেয়া আক্তারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বার্তা পাঠান। এতবড় পরাজয়ের পরও রোকেয়া আক্তারে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি রায়ের অনুলিপি হাতে পাননি। এ ছাড়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবার চিন্তা করছেন তাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হলে তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারেন না।

একটি বিদ্যাপিঠের শিক্ষকদের পদ আঁকড়ে পড়ে থাকার জন্য এরকম বেহায়াপনা দেখলে আসলেই দেশের ভবিষ্যত নিয়ে কিছুটা হলেও সংকিত হতে হয়, এধনরের পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করবার খেলা দেশের সব নামকরা ইস্কুল কলেজেই দেখা যায়, অধ্যক্ষ পদটি বাগানোর জন্য কিছু শিক্ষকদের ক্ষমতাসীনদের জুতার কীভাবে চাটতে পারে ছাত্র জীবনে তা নিজের চোখে কিছুটা হলেও দেখেছি , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তো সামান্য একটি পদের জন্য বিএনপির একই গ্রুপের শিক্ষক আরেক শিক্ষককে শিবিরের খুনি ক্যাডার দিয়ে খুন করে লাশ ম্যানহলে নিক্ষেপের মতো ঘটনাও আমরা পত্রিকা পড়ে জেনেছি।

এবারের ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের হয়েছে। আমার মনে হয় সময় এসেছে এ বাজেটের কিছুটা হলেও শিক্ষকদের নৈতিকতা শিখানোর কাজে ব্যয় করবার।

No comments:

Post a Comment